Pages

DSE

Freelancer

Freelance Jobs Freelance Jobs

Wednesday, July 7, 2010

ভেস্তে যাছে কলসেন্টারের স্বপ্ন

[ ] 2010-07-04

ভেস্তে যাছে কলসেন্টারের স্বপ্ন

মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কলসেন্টারের লাইসেন্স দেয়া হলেও শুধু দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে এ স্বপ্ন ব্যর্থ হতে চলেছে৷ প্রথম দিকে কলসেন্টারের প্রতি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল৷ দক্ষ জনবল, অবকাঠামো ও বিনিয়োগের অভাবে এই সেক্টর থেকে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই সরে গেছেন৷

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ কলসেন্টারের লাইসেন্স দিলেও বর্তমানে মাত্র ৫৮টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ বিধিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হলে কলসেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে বিটিআরসি৷ এ কারণে বাতিল বা ফেরত এসেছে ২০০ লাইসেন্স৷
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজীউদ্দিন আহমেদ  বলেছেন, মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন এবং ভবিষ্যতের অন্যতম   বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত হিসেবে কলসেন্টারকে বিকশিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷ এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবে সরকার৷
জানা গেছে, কলসেন্টার ভিলেজ গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে রাজধানীর কয়েকটি জায়গাকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে৷ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান বনানী ও মহাখালীতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) দুটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন৷ কারণ, কলসেন্টার ভিলেজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং অন্যান্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই থাকতে হবে৷
কলসেন্টার মূলতআউটসোর্সিংব্যবসার একটি অংশ৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠারে ক্রেতাদের সহযোগিতা, টেলিমার্কেটিং এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা, অফার ও তথ্য জানানোই কলসেন্টারের কাজ৷ একে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) বলা হয়৷ ২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ছিল ৩৮ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার৷ ২০০৯ সালেই তা বেড়ে ৬৪ হাজার ১২০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়৷ বিপিওর মধ্যে নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং (কেপিও), লিগ্যাল প্রসেস আউটসোর্সিং (এলপিও), রিসার্স প্রসেস আউটসোর্সিং (আরপিও) ও এডুকেশন প্রসেস আউটসোর্সিং (ইপিও) শীর্ষে রয়েছে৷ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে দেশের মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) বাড়ানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন তথ্যপ্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা৷
জানা গেছে, বিটিআরসি আগামী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১০-১৫) মোট পাঁচটি বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এর মধ্যে প্রথম দুটি তাদের নিজস্ব ভবনকেন্দ্রিক৷ তৃতীয় প্রস্তাবে রয়েছে বিটিআরসির মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং চতুর্থ প্রস্তাবে রয়েছে মনিটরিং৷ আর পঞ্চম প্রস্তাব হিসেবে রাখা হয়েছে কলসেন্টার ভিলেজ৷
কলসেন্টারের মূল পুঁজি ইংরেজিতে দক্ষতা৷ ইংরেজিতে দক্ষতা তৈরি করলে আমেরিকা-ইউরোপের চেয়ে ১০ শতাংশ সস্তায় দেশে জনবল পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ৷ তিনি বলেন, কলসেন্টার-শিল্প বিকাশে সরকার ও কমিশন সব ধরনের সুবিধা দেবে৷ এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে কলসেন্টার প্রশিক্ষণের বিষয়ে একটি পরিকল্পনা  তৈরিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেয়া হয়েছে৷ সম্প্রতি ভারতীয় কলসেন্টার প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানহিরো মাইন্ড মাইনএ বিষ েপ্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে বলে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছে৷ বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) জিয়া আহমেদ জানান, প্রথম দিকে কলসেন্টারের প্রতি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল৷ দক্ষ জনবল, অবকাঠামো ও বিনিয়োগের অভাবে এই সেক্টর থেকে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই সরে গেছেন৷ বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী লাইসেন্স নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে৷ যদি তা করা না হয় তাহলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে৷ মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিটিআরসি কলসেন্টারের লাইসেন্স দিয়েছিল৷
কলসেন্টার উদ্যোক্তারা বলছেন, কলসেন্টারের মাধ্যমে কোটি কোটি মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব এমন স্বপ্ন দেখানো হয়েছে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই স্বপ্ন মানুষের সামনে এমনভাবে তুলে ধরা হয়, উদ্যোক্তারা কলসেন্টারের লাইসেন্স নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে৷ প্রায় তিনশ লাইসেন্স দেয়া হয় সেই সময়৷ তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে মূলত কলসেন্টার নিয়ে বেশ কিছুকাল যাবত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রচার চলছে৷ প্রচার কাজটি শুরু হয় ডাটা এন্ট্রির কথা বলে৷ তখন ডাটা এন্ট্রির বাজারটি ছিল অনেক ছোট৷ বর্তমানে বাজারটির বিস্তার ঘটেছে দুনিয়াব্যাপী৷
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কলসেন্টারের মূল পুঁজি হচ্ছে ইংরেজি৷ ইংরেজি জানা ব্যক্তিরাই কাস্টমার কেয়ারে কাজ করতে পারেন৷ এ দেশে দক্ষ জনবল তৈরি হলে আমেরিকা ইউরোপের চেয়ে দশ গুণ বেশি সস্তায় জনবল পাওয়া যাবে৷ এই সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরি হলে আন্তর্জাতিকমানের সার্ভিস নিশ্চিত হবে৷ দেশে বর্তমানে টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম আন্তর্জাতিকমানসম্পন্ন৷ এই অবকাঠামো কলসেন্টার পরিচালনার জন্য যথেষ্ট৷ এর বাইরেও স্যাটেলাইট  বেজড টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ এই নেটওয়ার্ক থেকে হাইস্পিড ভয়েস এবং ডাটা আদান-প্রদান করা সম্ভব৷ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ১২ গিগাবাইট ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরো ২ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে৷
এদিকে কলসেন্টার স্থাপনে ৩০০ কোটি টাকার আইটি তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া যাবে৷ এক বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ কলসেন্টারকে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইটি তহবিল নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে কলসেন্টার খাতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ আইটি শিল্প প্রসারের ইইএফ (আইটি) তহবিল নীতিমালার ব্যাপক সংশোধন করা হয়৷ নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি খাত আইটি শিল্প বিগত সময়ে সরকারের আইটি তহবিল থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি৷ ওই সহায়তা ছাড়াই কল সেন্টারগুলো ইতিমধ্যে ১০০  কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে৷ নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে এই প্রথম কলসেন্টার স্থাপনে আর্থিক সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার৷

No comments:

Post a Comment