| ||||
একটি এসএমএসের জন্যও ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে! | ||||
প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ আইন কার্যকর হলে হয়রানির সুযোগ তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন টেলিযোগাযোগ আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার কে এম তানজিব-উল-আলম। প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে স্রেফ একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা (এসএমএস) পাঠানোর কিংবা বিনা লাইসেন্সে মোবাইল ফোন রাখার দায়ে ১০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করার সুযোগ তৈরি হবে। ব্যারিস্টার তানজিব গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০১ সালের বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইনের ৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ বা বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কেউ ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তথ্য দিলে তাকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এদিকে গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন ২০১০-এর বিলে বিধানটি বহাল রেখে জরিমানা ১০০ কোটি টাকা এবং কারাদণ্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তানজিব-উল-আলম বলেন, টেলিযোগাযোগ বা বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দায়ে এ পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। এ বিধানটি বাতিল না করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সাজার পরিমাণ কেন বাড়িয়েছে তা বোধগম্য নয়। বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইনের ৫৫ ধারার ৭ উপধারায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কেউ বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে তাকে অনধিক ১০ বছর জেল বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানার শাস্তি দেওয়া যাবে। প্রস্তাবিত আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তানজিব বলেন, আইনটি পাস হলে মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসি ইচ্ছা করলে এমনকি মোবাইল ফোন রাখার অপরাধেও যে কাউকে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং অনাদায়ে জেলে পাঠাতে পারবে। ব্যারিস্টার তানজিব বলেন, একসময় সিটিসেল ও গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে আদায় করা হতো। মোবাইল ফোন আসলে রেডিও অ্যাপারেটাস এবং তা রাখতে হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে ও শুল্ক দিতে হবে_এই ধারণা থেকেই সে সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হতো। বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট হলে আদালত ওই টাকা গ্রাহকদের বদলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের পরিশোধ করতে বলেন। বিলে ২০০১ সালের আইনের ধারা ৬৬-এর পর ৬৬ক যোগ করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী, দেশদ্রোহমূলক অথবা জনসাধারণের মধ্যে বিদ্বেষ, বিভেদ এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এমন বার্তা বা সংকেত পাঠানো হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে। এই ধারার মাধ্যমেও সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে হয়রানি করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করেন। তানজিব-উল-আলম গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গবেষণা সংস্থা ডি-নেট (ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায়ও প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ আইন নিয়ে এ ধরনের বিশ্লেষণের কথা জানান। ওই দিন তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিলের লাইনে লাইনে বিটিআরসির ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে নেওয়া আর টেলিফোন অপারেটরদের জরিমানার বিধান রয়েছে। একটি ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক কোটি টাকা করে জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব রয়েছে। এ প্রস্তাবনা পড়ে মনে হয়েছে, টেলিফোন অপারেটরদের কাছে কতভাবে কত প্রকারে টাকা আদায় করা যায় তার জন্য সব ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমার ধারণা, এই আইন পাস হলে করাপশন পাস হবে। আমলাদের টাকা উপার্জনের পথ খুলে যাবে।'ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুও সেদিন বৈঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণাকে ব্যর্থ করতে কিছু ভূত প্রশাসনে প্রবেশ করেছে। এরাই এগুলো করছে। টেলিযোগাযোগ খাত এখনো শিশু। সদ্য হাঁটতে শিখেছে। এই শিশু যাতে দৌড়াতে না পারে তার জন্য ওরা আইনের এ ধরনের সংশোধনী এনে তার পা ভেঙে দিতে চাইছে। |
Wednesday, July 7, 2010
একটি এসএমএসের জন্যও ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment