“এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা ,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।”…….রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর__
আমাকে কেউ যদি এই ভাবে ডাকে…..আমি সাড়া না দিয়ে পারি না….তাই তো আমাকে বিশ্ব কবির ডাকে সাড়া দিতেই হয়…………এই ডাকা তো একা বিশ্বকবির নয়…আপামর সমস্ত বাঙালীর……
হ্যাঁ , আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি বৈশাখ মাস বলছি.…..
আমার(বৈশাখ মাসের) নাম করণ করেন আর্য মুনি ঋষিরা… পহেলা বৈশাখ কি?
পহেলা বৈশাখ সব্দগত ভাবে পহেলা + বৈশাখ দুটি আলাদা শব্দ থেকে নেয়া।
পহেলা উৎপত্তিগত ভাবে ফারসী শব্দ পয়লা থেকে পহেলা , আর্থ হচ্ছে প্রথম (ভারত বর্ষে একসময় ফারসী ভাষার প্রচলন ছিল। ভারতে এখনো পয়লা শব্দটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু বাংলাদেশে বাংলা ভাষার অপভ্রংশ হয়ে পয়লা বৈশাখ কথাটি পহেলা হিসাবে চালু রয়েছে তবে এখনো পয়লা ও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়) আর বৈশাখ শব্দ যাকিনা এসেছে বিশাখা নক্ষত্রে সূর্যের একটি অবস্থান কে বুঝান হয়েছে।
পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। এদেশে বর্তমানে পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে মোট ৩টি সন গণনা পদ্ধতি চালু আছে। হিজরী বা আরবী সন, বাংলা বা ফসলী সন ও ইংরেজি বা গ্রেগোরিয়ান সনটি।
সম্রাট আকবরের আমলে ফারসী মাসের অনুকরণে বাংলা মাসের নাম ছিল যথাক্রমে ফারওয়ারদিন, উর্দিবাহিশ, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহারিবার, মেহের, আবান, আজার, দে, বাহমান ও ইসফান্দ। পরবর্তীতে নানা ঘটনাক্রমে মাসের নামগুলো বিভিন্ন তারকার নামানুসারে বর্তমান নামে রূপান্তরিত বা প্রবর্তন করা হয়।বাংলা বা ফসলী সনে বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহিত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ “সূর্যসিদ্ধান্ত” থেকে।বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে –
বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আষাঢ় – উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ভাদ্র – পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ফাল্গুন – উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল ফারসী ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজী বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে। আর হিজরী সনে তারিখ শুরু হয় সূর্য ডোবার সাথে সাথে।
একটি কথা বলে রাখা ভাল আজকের বাংলা সন যিনি প্রচলন করেন তিনি হচ্ছেন জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট।মুঘল সাম্রাজ্য ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত ছিল; অঞ্চলটি সে সময় হিন্দুস্থান বা হিন্দ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া আফগানিস্থান ও বেলুচিস্থানের বেশ কিছু এলাকাও মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৭০৭ সাল পর্যন্ত এর সীমানা বিস্তার করে, এবং ১৮৫৭ সালের এর পতন ঘটে। চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লঙের উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে দিল্লীর লোদী বংশীয় সর্বশেষ সুলতান ইবরাহিম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। সভাবতই অল্পবয়সে শাসনভার গ্রহণ করায় পুঁথিগত বিদ্যার অবসান ঘটে। তার সভাসদ্ ছিল ত্বত কালে মুঘল সালতানাতের মসুর ব্যক্তিগন যার পরবর্তীতে দীন-ই-এলাহী (নিজ ধর্ম) প্রচলনে প্ররোচনাদেয় তার সাম্রাজ্য রক্ষায় তিনি সাম্রাজ্যের রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে বিভিন্ন রাজবংশের রাজকন্যাদের বিয়ে করেন।
বাংলা বা ফসলী সন চালু হবার কারণঃ
শংকর বালকৃষ্ণ দীক্ষিতের মতে, হিন্দু পঞ্জিকা সৃষ্টির তিনটি যুগ রয়েছে_১. বৈদিক যুগ (অবর্ণিত প্রাচীনকাল থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ২. বেদান্ত-জ্যোতিষ যুগ (১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ) ৩. সিদ্ধান্ত-জ্যোতিষ যুগ (৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত)।
সেই তুলনায় সম্রাট আকবর (১৫৪২-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) তো সেদিনকার। আর তিনি বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।
তিনি নিজে বাঙ্গালা ভাষা ভাষি ছিলেন না, বাংলা জানতেনও না। আসলে বাংলা সন বলে সেই সময় কিছু ছিলই না। ইংরেজ শাসন আমলে দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যখন গ্রেগরি পঞ্জিকা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন আমাদের পঞ্জিকা আলাদা করে বোঝানোর জন্য এর সঙ্গে ‘বাংলা’ শব্দটি যোগ করা হয়।
জানা মতে, সম্রাট আকবরের সময় ভারতবর্ষে ৪০ ধরনের পঞ্জিকার প্রচলন ছিল। সারা দুনিয়ার মতোই এখানেও প্রধান প্রধান জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব পঞ্জিকা ছিল। আকবরের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যথেষ্ট উদার। তিনি যেমন মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মের নানা উপাদান নিয়ে ‘দিন-ই-ইলাহী’ নামে নতুন ধর্মের অবতারণা করেছিলেন, তেমনি প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকার ওপর ভিত্তি করেই একটি নতুন সন প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। খাজনা আদায় ও শাসনকাজ পরিচালনার সুবিধার্থে সারা ভারতবর্ষের জন্য তিনি একটি অভিন্ন সন প্রথা প্রচলন করেছিলেন মাত্র। কারণ, হিজরী সন বছরে ১০ দিন এগিয়ে যায় বলে ফসল উত্তোলন ও খাজনা আদায়ের মৌসুমে অসুবিধা দেখা দিয়েছিল। আর হিজরীর সঙ্গে মিল রেখে এই সনের সূচনা কাল নির্ধারণ করা হলেও হিন্দু পঞ্জিকার সঙ্গে এর কোনো বিরোধ ঘটেনি।
বাংলা দিনপঞ্জীর সঙ্গে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুর হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। কাজেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বর্তমান পরিচিত পান্তা খাওয়া বাঙ্গালীর পহেলা বৈশাখের উৎসব।
বাংলা সন বা ফসলী সন বাংলাদেশ এবং ভারত বর্ষের একটি সৌরপঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরিয়ান সনের মতো বাংলা সনেও মোট ১২ মাস। এগুলো হল বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আকাশে রাশিমণ্ডলীতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলা মাসের হিসাব হয়ে থাকে। যেমন যে সময় সূর্য মেষ রাশিতে থাকে সে মাসের নাম বৈশাখ।
বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। বাংলা সন শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে যে দিনটি ইংরেজী বর্ষপঞ্জির ১৪/১৫ এপ্রিল (ভারতে) এবং ১৪ এপ্রিল (বাংলাদেশে)। ‘লা সন সব সময়ই গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির চেয়ে ৫৯৩ বছর কম।
মধ্যযুগে বাংলা সনের প্রচলনের আগে কৃষি ও ভূমি কর বা খাজনা আদায় হতো ইসলামিক হিজরী বর্ষপঞ্জি অনুসারে । হিজরী বর্ষপঞ্জি চান্দ্রমাস নির্ভর বলে সব সময় কৃষি কর্মকাণ্ড অর্থ বর্সের সাথে মিলতো না । তাতে কৃষি জীবিদের ফসলহীন ঋতুতে কর বা খাজনা দেবার জন্য বাধ্য করা হতো । এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুঘল সম্রাট আকবর (শাসনকাল ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দ হতে ১৬০৫ খৃষ্টাব্দ) বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন । রাজকীয় জ্যোর্তিবিদ আমির ফতেউল্লাহ্ সিরাজী চান্দ্রমাস নির্ভর হিজরী বর্ষপঞ্জি এবং সৌরমাস নির্ভর হিন্দু বর্ষপঞ্জি গবেষণা করে একটি নতুন বর্ষপঞ্জি প্রস্তাব করেন ।দিল্লির সম্রাট আকবর ৯৬৩ হিজরী, ২ রবিউছ ছানি, রোজ শুক্রবার, ইংরেজি ১৪ এপ্রিল ১৫৫৬ তারিখ থেকে পয়লা বৈশাখ পালনের রেওয়াজ শুরু করেন। ওইদিন সম্রাট আকবরের সিংহাসনে অভিষেক হয়। সে দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য সম্রাট আকবর তাঁর সাম্রাজ্যে সর্বত্রই হিজরী সনের পরিবর্তে সৌরবৎসর পালনের সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলেই সূচনা হলো বাংলা বর্ষপঞ্জির বা বাংলা তথা ফসলী সনের । বাংলা সনের সূচনা হয় ফসল তোলার সময়ে যখন কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে বছরের অন্য সময়ের চাইতে সচ্ছল থাকে । নতুন বর্ষপঞ্জি প্রথম দিকে ফসলী সন হিসেবে পরিচিত ছিল ।
বাংলা তথা ফসলী সন শুরু হয়েছিল কবে থেকে সেটা তো অনেকেই জানেন ১৫৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে। তবে শুরুর দিন কিন্তু ১ সাল ছিল না, ছিল ৯৬৩ সাল। তখন এ দেশে হিজরী সাল প্রচলিত ছিল। কিন্তু ফসল তোলার সাথে খাজনা পাবার বিষয়টি জড়িত আর এই কারণে একটি বাৎসরিক সময় নির্ধারণের জন্য ফসলী সনের প্রবর্তন করে সম্রাট আকবর। হিজরী বছরটিকে ঠিক রেখেই নতুন একটি বর্ষপঞ্জি চালু করা হয়। দুনিয়ায় দুই ধরনের ক্যালেন্ডারের প্রচলন আছে, চন্দ্রবৎসর ও সৌরবর্ষ। সূর্যকে মানদণ্ড ধরে সৌরবর্ষের দিনের হিসাব হয় আর চন্দ্রবর্ষের দিনের হিসাবে মানদণ্ড ধরা হয় চাঁদকে। খ্রিস্টাব্দ, বাংলা তথা ফসলী সন হচ্ছে সৌরবর্ষ। আর হিজরী হচ্ছে চন্দ্রবর্ষ। সৌরবর্ষের চেয়ে ১১ দিন ছোট চন্দ্রবর্ষ। হিজরী ৯৬৩ থেকে বঙ্গাব্দ শুরু বছর থেকে এ পর্যন্ত পেরিয়েছে (১৪৩১-৯৬৩)=৪৬৮ বছর। প্রতিবছর ১১ দিন হিসাবে ৪৬৮ বছরে দিনের পার্থক্য (৪৬৮ গুন ১১)=৫১৪৮ দিন। মানে (৫১৩৭/৩৬৫)=১৪.০৭৩৯ বছরের পার্থক্য। বাংলা তথা ফসলী ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমণ্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ নক্ষত্রের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে।
বাংলা তথা ফসলী সনের সংস্কারঃ
ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় মধ্যরাত্র থেকে, হিজরী বর্ষপঞ্জি শুরু হয় সূর্যাস্ত থেকে আর বাংলা তথা ফসলী সন শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে।ফসলী তথা বাংলা নববর্ষেও কিন্তু লিপইয়ার বা অধিবর্ষ আছে। বাংলা সনেও ৩৬৫ দিনে বছর। কিন্তু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে সময় লাগে ৩৬৫ দিনের বেশি। এই বেশি সময়টুকু যোগ করে প্রতি চার বছরে একবার অধিবর্ষ হয়। প্রথম দিকে বাংলা ক্যালেন্ডারে এমন হিসাব-নিকাশ রাখার বালাই ছিল না। কেউ রাখতও না। বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংশোধন উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে । ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাববালী প্রদান করে। বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের । যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে । এ প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড । এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয় । ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য । জ্যোর্তিবিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি । বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের । এই সমস্যা গুলোকে দূর করবার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদূল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব করে ।এগুলো হচ্ছেঃ
বছরের প্রথম পাঁচ মাস বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস । প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে । যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলায় পুরোনো বাংলা সনের প্রচলনই থেকে গেছে এর মূল কারণ এর সাথে হিন্দুদের বৈশাখী বরণ, গণেশ পূজা ও হালখাতার রেওয়াজ প্রচলিত।
১৪১৮ সালের আমার মাসের(বৈশাখ মাসের) ক্যালেণ্ডার
নববর্ষ কোথায় কোথায় পালিত হয়ঃ
সাধারণ ভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান থেকেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
ব্যাবিলনে নববর্ষ উদ্যাপিত হতো আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। সেটি ছিল সে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় উৎসব, চলত ১১ দিন ধরে। চীন, ভিয়েতনাম, লাওসেও আছে এ ধরনের নববর্ষ পালনের উৎসব। লাওসে নববর্ষের উৎসব যে দিনটিতে শুরু হয় সেটি ঠিক আমাদের দেশে পালিত পয়লা বৈশাখ এর মত।
আমাদের দেশে এই প্রথা কি ভাবে পালিত হয়ঃ
মোগল পূর্ববর্তী আমলে এদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিল না। আমাদের দেশে পয়লা বৈশাখ পালন হওয়ার মধ্যে মোটামুটি এরকম। ভোর সাকালে রমনা বটমুলে(আসলে অস্ত গাছ) প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানায়, নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষকরণ, রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরন, বৈশাখী মেলা, রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশের ভোজ, জীবজন্ত, রাক্ষস-খোক্কসের ও হাতির(গণেশের) প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল(মঙ্গল যাত্রা) এবং এ উপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের সৌন্দর্যের প্রদর্শনী ও অবাধ বিচরণ, সহপাঠী সহপাঠিনীদের একে অপরের দেহে চিত্রাকণ। হাল খাতা খোলা(বছরের নতুন হিসাব শুরু করা)।
এবার দেখা যাক এর সাথে মুসলমান দের বেছে চলার কি আছে?
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলায় (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) পূজা এখনো বাংলা বর্ষপঞ্জি নির্ভর।বাংলায় গণেশ হিন্দু র্ধমালম্বীদের এক দেবতা। এই অঞ্চলে গণেশের সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখ তারিখে বাংলা নববর্ষের দিন পালিত হয়। প্রত্যেক বাঙ্গালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এইদিন গণেশ পূজিত হন। কলকাতার কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গণেশ ও লক্ষ্মীর প্রতিমা এবং হালখাতা নিয়ে অনেকে এই দিন সকালে পূজা প্রদান করতে যান। পূজা হয় গঙ্গাতীরে ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য মন্দিরেও। দুর্গামূর্তির ডানদিকে অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাঁদিকে গণেশের মূর্তি নির্মান করে পূজা করা হয়। সকালের সূর্য্যকে স্বগত জানানো তথা সূর্য্য পূঁজা করা হয় যা সম্রাট আকবর করত। বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।
সাধারণ ভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান থেকেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
ব্যাবিলনে নববর্ষ উদ্যাপিত হতো আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। সেটি ছিল সে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় উৎসব, চলত ১১ দিন ধরে। চীন, ভিয়েতনাম, লাওসেও আছে এ ধরনের নববর্ষ পালনের উৎসব। লাওসে নববর্ষের উৎসব যে দিনটিতে শুরু হয় সেটি ঠিক আমাদের দেশে পালিত পয়লা বৈশাখ এর মত।
আমাদের দেশে এই প্রথা কি ভাবে পালিত হয়ঃ
মোগল পূর্ববর্তী আমলে এদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিল না। আমাদের দেশে পয়লা বৈশাখ পালন হওয়ার মধ্যে মোটামুটি এরকম। ভোর সাকালে রমনা বটমুলে(আসলে অস্ত গাছ) প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানায়, নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষকরণ, রবীন্দ্রসংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরন, বৈশাখী মেলা, রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশের ভোজ, জীবজন্ত, রাক্ষস-খোক্কসের ও হাতির(গণেশের) প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল(মঙ্গল যাত্রা) এবং এ উপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের সৌন্দর্যের প্রদর্শনী ও অবাধ বিচরণ, সহপাঠী সহপাঠিনীদের একে অপরের দেহে চিত্রাকণ। হাল খাতা খোলা(বছরের নতুন হিসাব শুরু করা)।
এবার দেখা যাক এর সাথে মুসলমান দের বেছে চলার কি আছে?
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলায় (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) পূজা এখনো বাংলা বর্ষপঞ্জি নির্ভর।বাংলায় গণেশ হিন্দু র্ধমালম্বীদের এক দেবতা। এই অঞ্চলে গণেশের সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখ তারিখে বাংলা নববর্ষের দিন পালিত হয়। প্রত্যেক বাঙ্গালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এইদিন গণেশ পূজিত হন। কলকাতার কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গণেশ ও লক্ষ্মীর প্রতিমা এবং হালখাতা নিয়ে অনেকে এই দিন সকালে পূজা প্রদান করতে যান। পূজা হয় গঙ্গাতীরে ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য মন্দিরেও। দুর্গামূর্তির ডানদিকে অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাঁদিকে গণেশের মূর্তি নির্মান করে পূজা করা হয়। সকালের সূর্য্যকে স্বগত জানানো তথা সূর্য্য পূঁজা করা হয় যা সম্রাট আকবর করত। বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।
প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানায় যা সূর্য্য পুজার শামিল। সম্রাট আকবর সে আমলের।সম্রাট আকবর সে আমলের উলামায়ে ছু দের কবলে পরে শেষের দিকে সূর্য্যের পূজা করা শুকরে। আর সেই রসশ তথা প্রথা আমাদের মধ্যে সুকৌশলে প্রবেশ কারিয়ে দেয়া হচ্ছে। কালামু্ল্লাহ্ শরীফ এর সুরা নমলে আল্লাহ্ পাক বলেন “আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।“
ধর্মীয়, সামাজিক, প্রশাসনিক, দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি কারণে পঞ্জিকা প্রণীত হয়। আধুনিককালে আন্তর্জাতিক প্রয়োজনও তৈরি হয়েছে। বাংলা সন বলতে আমরা যে পঞ্জিকা পাই, তার কোনো প্রয়োগ শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমানের জীবনে আছে? নেই। আইন করা সত্ত্বেও তা কি আমাদের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে? না।
ধর্মীয়, সামাজিক, প্রশাসনিক, দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি কারণে পঞ্জিকা প্রণীত হয়। আধুনিককালে আন্তর্জাতিক প্রয়োজনও তৈরি হয়েছে। বাংলা সন বলতে আমরা যে পঞ্জিকা পাই, তার কোনো প্রয়োগ শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমানের জীবনে আছে? নেই। আইন করা সত্ত্বেও তা কি আমাদের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে? না।
খুব ভাল হিচেহ।
ReplyDeletevisit me Clipping Path Experts