বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেই এমন ১৬ ধরনের ৫৭২ সেট যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে সরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক। এসব যন্ত্রপাতির দাম এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও শুল্ক কর্মকর্তাদের ধারণা, এগুলোর দাম ১০-১৫ কোটি টাকা হবে। কেননা আমদানি করা ৫১২টি অপটিক্যাল ডিস্ক সফটওয়্যার যথেষ্ট দামি। চালানে বিটিআরসির ছাড়পত্র নিয়ে আমদানি করা মাত্র চার ধরনের ৫০ সেট যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। এগুলোর দাম ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯১২ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ থেকে টানা তিন দিন শুল্ক কর্মকর্তা, বিটিআরসি প্রতিনিধি, আমদানিকারকের প্রতিনিধি এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মিল্কওয়ে শিপিংয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এসব পণ্যভর্তি কনটেইনার দুটি খুলে যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে এই অমিল পাওয়া যায়। প্রাপ্ত মালামালের তালিকায় (ইনভেনট্রি) সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ সম্মতিসূচক সই করে।
এর আগে দুই বার কনটেইনার দুটি খোলা হয়েছিল। কিন্তু আমদানিকারক বা তাদের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির অনাপত্তিপত্র দেখাতে না পারায় চালানটি খালাস করা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে টেলিটক পরপর দুটি অনাপত্তিপত্র শুল্ক কর্তৃপক্ষকে দেয়। কিন্তু এ দুটির সঙ্গে আমদানি করা যন্ত্রপাতির মিল ছিল না। পরে অনাপত্তিপত্র দুটি ভুলক্রমে দাখিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে টেলিটক কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাহার করে নেয়। তৃতীয় দফায় বিটিআরসির যে অনাপত্তিপত্র দাখিল করা হয় তার ভিত্তিতে ৩১ মার্চ কনটেইনার দুটি খোলা হয়। এতেও অমিল পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টেলিটক এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের শুল্ক আইনের ১৬ ও ৩২ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ এনে আইনানুন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে সুপারিশ করেন। এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বিটিআরসিকেও দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
যোগাযোগ করা হলে টেলিটকের ব্যবস্থাপক (লজিস্টিক সাপোর্ট) হেদায়েতুল কবির আমদানি করা যন্ত্রপাতি ত্রিপক্ষীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু অমিল পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এতে শুল্ক কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে কিছু অভিযোগ এনেছে। আমরা এখন বিটিআরসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বিটিআরসি যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মেনে নেব।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পণ্যের চালান আমদানি নিয়ে দুটি সরকারি সংস্থার মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। আমরা বলেছি যেসব পণ্যসামগ্রী আমদানি হয়েছে তা যদি বিটিআরসি প্রত্যয়ন করে দেয়, তাহলে পণ্য খালাসে আমাদের আপত্তি থাকবে না। আমরাও বিটিআরসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। যদি ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য থাকে তার জন্য বাড়তি শুল্ক-কর দিতে হবে।’ বন্দর সূত্র জানায়, জার্মানি থেকে ডিসেম্বর মাসে প্রতিটি ৪০ ফুট দীর্ঘ দুটি কনটেইনারে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় শুল্কও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে খালাস করার মুহূর্তে কেন্দ্রীয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের আপত্তির মুখে চালানটি আটক করা হয়।
No comments:
Post a Comment