একত্রীকরণ বা মার্জের বিকল্প নেই ভারতের মোবাইল অপারেটরদের। বিশ্লেষকরা ভারতের মোবাইল ফোনের বাজার সম্পর্কে এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ মুহূর্তে ভারতের মোবাইল ফোন অপারেটর হিসাবে প্রতিযোগিতা করছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রতিনিয়তই তাদের সবচেয়ে কম রেটের অফার করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসেই ভারতের বাজারে দেড় থেকে দুই কোটি নতুন মোবাইল ব্যবহারকারী বাড়ছে। গত বছর ভারতে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেড়ে ৬১ কোটি ৭৫ লাখ ছুঁয়েছে। যার অর্থ ভারতের ৫৫ শতাংশ মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কিন্তু এই তথ্য দিয়ে বাজার ব্যবস্থার পুরো বাস্তবতা বোঝা অসম্ভব।প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রতিযোগিতার কারণে কল চার্জ নামিয়ে আনতে হয়েছে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ মুহূর্তে দেশটির মোবাইল অপারেটরদের কলরেট যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম। তার ওপর আবার থার্ড জেনারেশন মোবাইল ফোনের ওয়্যারলেস স্পেকট্রামের লাইসেন্স পেতেই ঋণ জর্জরিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কনসালটেন্সি এনালাইসিস ম্যাসনের ডিরেক্টর কুনাল বাজাজ বলেন, 'যে হারে মোবাইল ফোন কম্পানি বাড়ছে তাতে কম্পানিগুলোর একত্রীকরণ অপরিহার্য। '৩ বছর আগে ১১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে হাচিসন এসারের স্বত্ব কিনে নেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের কম্পানি ভোডাফোন সম্প্রতি তার কম্পানির উদ্বৃত্তপত্রে প্রদর্শিত মূল্য (বুক ভ্যালু) চার ভাগের এক ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। ভারতী এয়ারটেলের গত ১২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ চূড়ায় থাকা শেয়ারের মূল্য সম্প্রতি পড়ে গেছে ৪০ শতাংশ। প্রায় একই রকম পতন ঘটেছে ধনকুবের অনীল আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের শেয়ারের মূল্যের। ভারতী এয়ারটেলের স্বত্বাধিকারী সুনীল ভারতী মিত্তাল ৩ বছরের মধ্যে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রথমবারের মতো লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সও ঋণের বোঝা কমাতে প্রতিষ্ঠানটির ২৬ শতাংশ স্বত্ব বিক্রি করতে চাইছে। এছাড়া নরওয়ের টেলেনর, জাপানের ডোকোমো, রাশিয়ার সিস্তেমা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান এতিসালাতের সঙ্গে মিলে যেসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এই মুহূর্তে ভারতের মোবাইল ফোন বাজারে সরব। তাদেরকেও যথেষ্ট ধুঁকতে হচ্ছে এ বাজারে। মুম্বাইয়ের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান কারভির বিশ্লেষক হারিৎ শাহর মতে, মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়বে, সেটা কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু মোবাইল সেবার দাম নির্ধারণ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলছে সে কারণেই এই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।আগামী অক্টোবরে সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে পারে যে গ্রাহক মোবাইল ফোনের অপারেটর বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বদল করলে তার আগেকার মোবাইল নম্বরটি অপরিবর্তিত থাকবে। ফলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরেক দফা এ সেবার দাম কমাতে হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সেবার দাম নির্ধারণের ফলে প্রায় প্রতিটি কম্পানির মোবাইল ব্যবহার থেকে গড় আয়ও কম হচ্ছে। কম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক বেশি না হওয়া সত্ত্বেও এ বছর সে দেশে মোবাইল ব্যবহার থেকে গড় আয় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।প্রথমদিকে ভারতের বাজারে ঢোকা প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করতে পেরেছে, সে কারণেই আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ঢুকতে আকৃষ্ট হয়েছে তখন। কারভির বিশ্লেষক হারিৎ শাহ জানান, মোবাইলের বেশির ভাগ বাজারে বড়জোর ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে। চীনে যেমন মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল অপারেটর হিসাবে ব্যবসা করছে।ভারতের ক্ষেত্রে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দেশটির সরকার গত মে মাসে থার্ড জেনারেশন (থ্রিজি) ও ব্রডব্যান্ডের অনুমোদন দিয়েছে। বাজারে থ্রিডি লাইসেন্স পেতে ও সেবা বিক্রি করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজির পরিমাণ অনেক থাকতে হবে এবং এ প্রযুক্তির ফলে সেবার মানও বেড়ে যাবে। ফলে মোবাইল সম্পর্কিত সেবার মান বৃদ্ধির পাল্লায় পড়ে খরচ বাড়াতে বাজার থেকে অনেক প্রতিষ্ঠানই ছিটকে পড়বে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২০ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে ভারতে মোবাইল ফোন কম্পানির সংখ্যা ছয়-সাতে নেমে আসতে পারে বলেও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ পূর্বাভাস দিচ্ছেন। তাই সামনের বছরের শুরুর দিকে কম্পানিগুলোর একত্রীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট খাতের বিনিয়োগকারীদেরও অপেক্ষা করতে হবে সে পর্যন্তই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিমধ্যেই অনেক একত্রীকরণ ও স্বত্ব ক্রয়ের মাধ্যমে অধিগ্রহণের কাজ এগুচ্ছে। সেজন্য আগামী কয়েক বছর ভারতের মোবাইল খাতের জন্য বেশ কঠিন সময় আসছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এএফপি। |
No comments:
Post a Comment